গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে লাইসেন্স বিহীন বেসরকারি ক্লিনিকে চলছে অস্ত্রপচার। ক্লিনিকের মালিকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন করেই এসব ক্লিনিকের কার্যত্রম শুরু করেছেন। ক্লিনিক গুলোতে মান সম্মত কোন অপারেশন থিয়েটার নেই। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। নাসিং পাশ করা নার্স বা টেকনিশিয়ান এসব ক্লিনিকে নেই। ক্লিনিক মালিক ও তাদের স্বজনরাই চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান,আয়া, ওয়ার্ডবয় ও ক্লিনিক ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মান যাচাইয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন তদারকি নেই। এ সুযোগে ক্লিনিকগুলো প্রতারণার ফাঁদ পেতে রোগী নিয়ে রমরমা বাণিজ্য করে যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় ২১ টি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়গনেস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ টিরই লাইসেন্স নেই। ৪ টির লাইসেন্স আছে। কিন্তু নবায়ন নেই।
লাইসেন্স বিহীন ইসলামিয়া হাসপাতাল এ্যাড ডায়গনেস্টিক সেন্টারে মালিক মুকসুদপুর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম গাজী। তার স্ত্রী সানিয়া সুলতানা এ হাসপাতাল পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেই আড়াই মাস আগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেই আমরা ক্লিনিক শুরু করেছি। এখনো ওটিতে এসিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়নি। তারপরও এখানে সিজারিয়ান সহ সব ধরনের অপারেশন করা হচ্ছে। আমাদের ক্লিনিকে কাগজে কলমে ১জন আরএমও সহ ৩ জন চিকিৎসক ও ৬ জন নার্সকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ক্লিনিকে সব সময় চিকিৎসক ও নার্স থাকার কথা। কিন্তু তারা সরকারি চাকরি করেন। তাই অফিস শেষে অনকলে ক্লিনিকে এসে তারা অপারেশন করেন । সব ক্লিনিকে এভাবে ডাক্তার আসে দাবি করে তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত এ ক্লিনিকে ৬০ টি অপারেশন হয়েছে। প্রতিদিনই এ ক্লিনিকে অপারেশন চলছে। চিকিৎসক ও নার্স সব সময় থাকেনা। তাদের অনুপস্থিতিতে আমরাই ক্লিনিকে চিকিৎসা সহ পরিচালনার কাজ করি।
ওই ক্লিনিকের নার্স সুষমা বলেন, আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ। গত ৮ বছর বিভিন্ন ক্লিনিকে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এখানে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি। ওই প্রতিষ্ঠানের নার্স নিলা পারভীন বলেন , আমি ২০১৭ সালে এসএসসি পাশ করেছি , আমারে কোন নার্সিং সার্টিফিকেট নেই । অন্য নার্স ফারজান বলেন আমার একাডেমিক কোন সার্টিফিকেট বা পড়াশোনা নেই। এখানে নার্সের দ্বায়িত্ব পালন করছি। নার্সের কাজও শিখছি।
ভর্তি রোগী ডলি আক্তার ও রত্না বেগম বলেন, সিজারিয়ান আপরেশনের আগে আমরা ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করেছি । অপারেশনের পর ডাক্তারের দেখা নেই। কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছিনা। ক্লিনিক মালিকের স্ত্রী ও স্বজনরা চিকিৎসক, নার্স, আয়া ও ওয়ার্ড বয়ের কাজ করেন। এখানে এসে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছি।
রোগীর স্বজন মুকসুদপুরের মহারাজপুর গ্রামের মিরাজ শেখ বলেন, এ ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। এখানে রোগী জীবন নিয়ে রমরমা বাণিজ্য চলছে। এটি বন্ধ করতে হবে।
গোপালগঞ্জে সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন,অনলাইনে ক্লিনিকের লাইসেন্সের আবেদন করার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্তের জন্য আমাদের কাছে কাগজপত্র পাঠাবে। আমরা তদন্ত করে সন্তোষ জনক প্রতিবেদন দিলেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লাইসেন্স দেবে। লাইসেন্স পাওয়ার পর ক্লিনিক শুরু করতে হবে। আমরা লাইসেন্স ও নবায়ন নেই, এমন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।